আনোয়ারা সরকারি আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০২৫ সালের এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ- ৫ পেয়েছেন তাজনীন মেহেজাবীন চৌধুরী।
তবে কেনো জানি রেজাল্ট নিয়ে তিনি নিজেইকে প্রশ্ন করলো আর কিছু করা যায় না?
এই ভেবে সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলো হঠাৎ মনকে বুঝানোর জন্য তাজনীনের মনে হলো “রেজাল্ট স্কোর” চেক করবে।তাই ওয়েবসাইটে গিয়ে রেজাল্ট চেক করতে শুরু করলো প্রথম সায়েন্স দেখাচ্ছে তারপর দেখা গেলো ব্যবসায় শিক্ষা রেজাল্ট।
রেজাল্ট দেখে আনন্দে আত্নহারা হয়ে মা বলে জোরে চিৎকার দিলো মা ভয় পেয়ে গেলো আমার চিৎকার শুনে।আমি মাকে জড়িয়ে ধরে বললাম মা আমি চট্টগ্রাম বোর্ডের ব্যবসায় শিক্ষা শাখায় প্রথম স্থান করেছি ।মা খুশিতে আত্নহারা হয়ে বলছিল মা আমি আগে জানতাম আমার মেয়ে আমাকে ভালো রেজাল্ট উপহার দিবে। ১৩০০ নাম্বারের পরীক্ষায় সে পেয়েছে ১২৩৭ নাম্বার।
মেধা, নিষ্ঠা ও নিরবচ্ছিন্ন পরিশ্রমের এক উজ্জ্বল প্রতিচ্ছবি তাজনীন মেহেজাবীন চৌধুরী।প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে সে অসাধারণ কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন। শিক্ষা, নৈতিকতা ও সাংস্কৃতিক চর্চার সমন্বয়ে এক অনন্য প্রতিভার নাম মেহেজাবীন।
ছোটবেলা থেকেই মেধাবী সে, মায়ের স্বপ্ন বিচার বিভাগে কাজ করা:
মাত্র তিন বছর বয়সে বাবাকে জীবন থেকে হারান মেহেজাবীন। তার একমাত্র অনুপ্রেরণা হচ্ছে মা।মা নিজে কখনো মা হয়েছে, কখনো বাবা হয়েছে আবার এমনকি তিনি একজন ভালো বন্ধুও বটে ।তিনি আমার ইচ্ছা শক্তি একমাত্র অবলম্বন। ছোট থেকে মায়ের স্বপ্ন ছিলো আমি জজ হবো।বাংলাদেশের বিচার বিভাগে ন্যায় বিচারে কাজ করে যাবো। মায়ের স্বপ্ন আমার স্বপ্ন। তাই ছোট বেলা থেকে বাংলাদেশের বিচার বিভাগে কাজ করার ইচ্ছে। আমার সেই ইচ্ছা শক্তি নিয়েই এগিয়ে যেতে চাই।
তাজনীন মেহেজাবীন চৌধুরীর মা শাহীন আক্তার স্থানীয় ডুমুরিয়া রুদুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন সহকারী শিক্ষিকা এবং তাজনীন ও তার প্রাথমিক শিক্ষাজীবন সেখানে শেষ করেন ।তার মা বলেন তাহার হৃদয়ে বহু বছর ধরে লালিত এক স্বপ্ন আজ ধীরে ধীরে বাস্তব হয়ে উঠছে।তিনি আরো বলেন—
“আমার মেয়ের ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন ছিল আমার মেয়ে একজন জজ হবে।বাংলাদেশের বিচার বিভাগে ন্যায় বিচারের জন্য কাজ করে যাবে, এই স্বপ্ন নিয়ে ওর পড়াশোনায় সবসময় আমি দোয়া করেছি। এখন চট্টগ্রাম বোর্ডের ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে প্রথন স্থান অর্জন করে শীর্ষ অবস্থানে এসেছে, এটা আমাদের জন্য বড় গর্বের বিষয়। সবাই যেন তার জন্য দোয়া করেন, যেন সে তার স্বপ্ন পূরণ করতে পারে।”
তাজনীন মেহেজাবীন চৌধুরীর কৃতজ্ঞতা ও অর্জন –
১.বঙ্গবন্ধু অলিম্পিয়াডে জাতীয় পর্যায়ে ১ম স্থান (২০২২)।
২.জাতীয় শিশু পুরস্কার প্রতিযোগিতা ২০২২ এ উপস্থিত বক্তৃতায় আঞ্চলিক পর্যায়ে উপস্থিত বক্তৃতায় ১ম।
৩.জাতীয় শিশু কিশোর ইসলামী সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা ২০২৩ এ জাতীয় পর্যায়ে উপস্থিত বক্তৃতায় ৩য়।
৪.DLC Community Leader Campaign 2023 এ জাতীয় পর্যায়ে ৩য় এবং একমাত্র নারী বিজয়ী।
৫.জাতীয় শিশু কিশোর ইসলামী সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা ২০২৪ এ জাতীয় পর্যায়ে রচনা প্রতিযোগিতায় ১ম, উপস্থিত বক্তৃতায় ২য় এবং সম্মিলিত ভাবে চ্যাম্পিয়ন।
৬.ইস্পাহানি মির্জাপুর বাংলাবিদ ষষ্ঠ বর্ষে জাতীয় সেরা ৫০ এর মধ্যে ৪০ তম।
৭.মুজিব অলিম্পিয়াড ২০২৪ এ চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পর্যায়ে বিজয়ী।
৮.লিঙ্গুইস্টিক অলিম্পিয়াড ২০২৫ এ আঞ্চলিক পর্যায়ে ১ম।
৯.জাতীয় শিশু পুরস্কার প্রতিযোগিতা ২০২৪-২০২৫ সেশনে চট্টগ্রাম বিভাগীয় পর্যায়ে রচনা,আবৃত্তি ও উপস্থিত বক্তৃতায় ১ম।
১০.সৃজনশীল মেধা অন্বেষণ প্রতিযোগিতায় ২০২৩ এ বাংলাদেশ স্টাডিজ বিভাগে চট্টগ্রাম জেলার সেরা মেধাবী।
১১.ন্যাশনাল আর্থ অলিম্পিয়াড ২০২৪ এ বিভাগীয় পর্যায়ে বিজয়ী।
নিজের অনুভূতি জানাতে গিয়ে তাজনীন মেহেজাবীন চৌধুরী বলেন, চেষ্টা করলে আরও ভালো কিছু করা সম্ভব ছিল—এই বিশ্বাস আমার সবসময় ছিল। তবে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে গিয়ে স্কুলের নির্বাচনী পরীক্ষার পর এসএসসির প্রস্তুতির জন্য ঠিকভাবে সময় দিতে পারিনি। তারপরও আলহামদুলিল্লাহ, চট্টগ্রাম বোর্ডে ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে সেরা হতে পেরেছি।
এই সাফল্য আমার একার না—আমার শিক্ষক, পরিবার ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের অবদান এতে অসীম। ভবিষ্যতে শুধু ভালো শিক্ষার্থী না, একজন ভালো মানুষ হতে চাই—যেন মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারি, সমাজের জন্য যেন কিছু করে যেতে পারি ।আর বাংলাদেশের বিচার বিভাগে কাজ করার স্বপ্ন আমার ছোট্ট বেলা থেকে। যদি আল্লাহ সহায় হোন,আমি আমার স্বপ্ন পূরণ করতে চাই।